ডলুরায় ৪৮ জন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থলের উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন
……………….
মিডিয়া সেল: অদ্য ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ তারিখ সকাল ১০.০০ টায় জেলা প্রশাসন, সুনামগঞ্জ এর আয়োজনে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ডলুরায় শায়িত মহান মুক্তিযুদ্ধে ৪৮ জন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সমাধিস্থলের উন্নয়ন কাজের (কবর বাঁধাই, যাচাইকৃত নাম ফলক স্থাপন, সৌন্দর্য বর্ধন, বাগান তৈরি করা) উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব এম.এ. মান্নান এমপি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সুনামগঞ্জ সদর, জনাব ইয়াসমিন নাহার রুমা এর সঞ্চালনায় ও জেলা প্রশাসক, সুনামগঞ্জ জনাব মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ এর সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, এমপি; সুনামগঞ্জ-৪ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, এমপি; সুনামগঞ্জ-সিলেট সংরক্ষিত মহিলা আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শামীমা শাহরিয়ার, এমপি, পুলিশ সুপার জনাব মো: মিজানুর রহমান বিপিএম, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জনাব নাদের বখ্ত, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জনাব খায়রুল হুদা চপল। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ ও শহীদ পরিবারের স্বজনগণ।
স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ জানান, ১৯৭১ সালের যুদ্ধকালীন যাঁরা এই এলাকায় শহীদ হন তাঁদের মৃতদেহগুলো এক জায়গায় এনে রাখতেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা মধু মিয়া। তাঁর একটি ছোট্ট নোটবুক ছিল। এই নোটবুকেই ভারতীয় সেনা কর্মকর্তাদের দিয়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাহিত করার আগে নাম-ঠিকানা লিখে রাখতেন। এভাবে তিনি ডলুরায় ৪২ জন মুসলিম মুক্তিযোদ্ধাকে সমাহিত এবং একই স্থানে ছয়জন হিন্দু মুক্তিযোদ্ধার মরদেহ দাহ করেন। এই শহীদদের মধ্যে সুনামগঞ্জ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধাগণ রয়েছেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে এই গণকবরকে ঘিরে শহীদ স্মৃতিসৌধ গড়ে তোলা হয়। শুরুতে স্মৃতিসৌধের চারদিকে পাঁচ ফুট উঁচু সীমানা প্রাচীর এবং ৪৮ শহীদের একটি নাম ফলক নির্মাণ করে দেন ৫ নম্বর সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন এ এস হেলাল উদ্দিন। তবে অধিকাংশ বীর শহীদদের নাম ব্যতিত পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা ছিল না। জেলা প্রশাসক, সুনামগঞ্জ এর উদ্যেগে মুক্তি সংগ্রাম স্মৃতি ট্রাস্ট ও শহীদ জগৎজ্যোতি দাস বীর বিক্রম পাবলিক লাইব্রেরীর সার্বিক সহযোগিতায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মালেক হোসেন পীর অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রতিটি বীর শহীদদের স্থায়ী ঠিকানায় সুনামগঞ্জসহ ১২ জেলায় সরেজমিনে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন। সেই আলোকে জেলা প্রশাসন ও মুক্তি সংগ্রাম স্মৃতি ট্রাস্ট, সুনামগঞ্জ এর যৌথ অর্থায়নে এই উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন জেলা হতে শহীদ পরিবারের সদস্যগণের স্মৃতিচারণের মাধ্যমে স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অনেক স্বজন বীর শহীদদের নাম ফলকের পাশে বসে অশ্রুপাত করেন এবং তাদের আবেগাপ্লুত অনুভূতি ব্যক্ত করেন। ৪৮ জন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ৪৪ জনের পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে নাম ফলক লাগানো হয়েছে। অবশিষ্ট ০৪ জনের নাম ঠিকানা পাওয়া যায় নি।
অদূর ভবিষ্যতে উক্ত সমাধিস্থলের চারপাশে সীমানা প্রাচীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও সংগ্রহশালা, প্রার্থনার জন্য মসজিদ, মন্দির ও ডাক বাংলো তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক, সুনামগঞ্জ এর আয়োজনে এ ধরনের উদ্যোগের জন্য তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
উক্ত অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসনসহ জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি; সুশীল সমাজের প্রতিনিধি; রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS