সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য: সুনামগঞ্জের পল্লী ও লোক সংস্কৃতিতে আমরা পাই মাঝির ভরাট গলার গান, রাখালের বাঁশির সুর। এছাড়া হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের অসংখ্য আউল, বাউল, পীর, ফকির, দরবেশ, বৈষ্ণব-সন্ন্যাসীদের অসংখ্য সৃষ্টিশীল গান যা মানুষকে পরমেশ্বরের সন্ধান পেতে সাহায্য করে। এগুলোও আমাদের এক মূল্যবান রত্নভাণ্ডার। বার মাসে তের পার্বণে ভরপুর হিন্দুদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি তাদের রয়েছে বিভিন্ন বর্ত, মেলা ও উৎসবাদি। মুসলিম সম্প্রদায়ের রয়েছে গাজির গীত, মুহররমের গান, মর্সিয়া, কাওয়ালী ইত্যাদি। এছাড়া এখানকার লাঠি খেলা ও নৌকা দৌড় এককালে খুবই জনপ্রিয় ছিল। আজো এর রেশ শেষ হয়ে যায়নি। থিয়েটার, নাটক, যাত্রা ও কবি গানের লড়াই তো আছেই। এক কথায় জারি সারি ভাটিয়ালীর দেশ আমাদের সুনামগঞ্জ। সুনামগঞ্জের সংস্কৃতিতে যাঁরা সম্মানিত করতে অবদান রেখেছেন তাঁদের মধ্যে হাছন রাজা, রাধারমণ, দূর্বীণ শাহ, শাহ আব্দুল করিম, গিয়াস উদ্দিন আহমদ, মহসিন রেজা চৌধুরী, মনিরুজ্জামান মনির, নির্মুলেন্দু চৌধুরী, আব্দুল হাই, ব্রহ্মানন্দ দাস, লালানিরেন্দু দে, বিপিন পাল, ক্ষীরোদ শর্মা, তরণী কান্ত দে, ছাদির উদ্দিন আহমদ, শাহ আবু তাহের প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য
পনাতীর্থঃ হিন্দুধর্মের সাধক পুরুষ অদ্বৈত মহাপ্রভুর মা লাভা দেবীর গঙ্গা স্নানের খুব ইচ্ছে ছিল। কিন্তু শারীরিক সামর্থ্যের অভাবে ইচ্ছা পূরণের সম্ভাবনা ছিল না। অদ্বৈত মহাপ্রভূ তার মায়ের ইচ্ছা পূরণের জন্য যোগসাধনা বলে পৃথিবীর সমস্ত তীর্থের পূ্ণ্য জল এক নদীতে এক ধারায় প্রবাহিত করে দিয়েছিলেন। এই জলধারাই পুরনো রেনুকা নদী বর্তমানে যা যাদুকাটা নদী নামে প্রবাহিত। তাহিরপুর থানার এই নদীর তীরে পনাতীর্থে প্রতি বৎসর চৈত্র মাসে বারুণী মেলা হয়। এই মেলা বারুণীযোগ নামে স্থানীয় ভাবে পরিচিত। প্রতি বৎসর লাখো হিন্দু পূণ্যার্থীর সমাবেশ ঘটে এই বারুণী মেলায়। অনেক মুসলমানও এই মেলা দেখার জন্য পনাতীর্থ যান । আপনিও ঘুরে আসতে পারেন।
হাছন রাজা মিউজিয়াম: (জন্ম ১৮৫৪ মৃত্যু ১৯২১ খ্রিঃ) সুনামগঞ্জ পৌরসভা এলাকার তেঘরিয়ায় সুরমা নদীর কোল ঘেঁষে দাড়িয়ে আছে হাছন রাজার স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি। এ বাড়িটি একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান। হাছন রাজা মূলত ছিলেন একজন সম্ভ্রান্ত জমিদার। মরমী সাধক হাছন রাজা জীবনে অসংখ্য গান রচনা করে আজ অবধি লোকপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করেছেন। কালোত্তীর্ণ এ সাধকের ব্যবহৃত কুর্তা, খড়ম, তরবারি, পাগড়ি, ঢাল, থালা, বই ও নিজের হাতের লেখা কবিতার ও গানের পাণ্ডুলিপি আজও বহু দর্শনার্থীদের আবেগ আপ্লুত করে। এই মরমী কবির রচিত গানে মুগ্ধ হয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হাছন রাজাকে পত্র মাধ্যমে অভিনন্দন ও প্রশংসা জানিয়েছিলেন। সুনামগঞ্জ পৌর এলাকাধীন গাজীর দরগা নামক পারিবারিক কবরস্থানে প্রিয়তম মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শুয়ে আছেন মরমী কবি হাছন রাজা। হাছন রাজার মাজার দেখার জন্য প্রতি বৎসর বহু দর্শনার্থীর সমাগম হয়।
ডলুরা শহীদদের সমাধি সৌধ: যে স্থানটিতে গেলে মুহূর্তেই ৪৮ জন মহান শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় অন্তত চোখে ভাসে তার নাম ডলুরা। পাহাড়ের পাদদেশে চলতি নদীর তীরে লুকায়িত আছে সেই একাত্তরের রক্তত্যাগ সংগ্রামের স্মৃতি চিহ্ন। মুক্তিযুদ্ধে সুনামগঞ্জের ইতিহাস খুব সমৃদ্ধ। মহান মুক্তিযুদ্ধে সীমান্তবর্তী ডলুরা ছিল সুনামগঞ্জের অন্যতম রণাঙ্গন। এই রণাঙ্গনটি ছিল ৪ নং বালাট সেক্টরের অধীন। উক্ত রণাঙ্গনে সম্মুখসমরে যে সমস্ত মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাৎ বরণ করেন তাদের কয়েকজনকে এখানে সমাহিত করা হয়। ১৯৭৩ সালে ৪৮ জন শহীদের স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ডলুরা শহীদ মাজার।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS